SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Admission
বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি - শব্দ ও পদ - বহুবচন গঠনের নিয়ম ও উদাহরণ

ব্যাকরণে বচন অর্থ সংখ্যার ধারণা। তাই, যে শব্দ দিয়ে ব্যাকরণে কোনো কিছুর সংখ্যার ধারণা প্রকাশ করা হয়, তাকে বচন বলে।

বাংলা ভাষায় বচন দু প্রকার । যথা : ১. একবচন ও ২. বহুবচন।

১. একবচন : যে শব্দ দিয়ে কোনো বস্তু, প্রাণী বা ব্যক্তির একটিমাত্র সংখ্যার ধারণা হয়, তাকে একবচন বলে। যেমন :

     পাখাটি খুঁজে পাচ্ছি না।
     গামছাখানা কোথায় রাখলে?
     কাজল কি বাড়ি ফিরেছে?
     শিক্ষক বললেন, “দুই আর দুই চার হয়।”

একবচন প্রকাশের উপায়

বাংলা ভাষায় একবচন প্রকাশের কিছু উপায় আছে। যেমন :

 

ক. শব্দের মূল রূপের সাথে কিছু যোগ না করে :

     ‘আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর, বসতে দেব পিঁড়ে। '
     আজ স্কুল ছুটি।
     রীতা গান শিখতে গেছে।
     বাস ঢাকা ছেড়েছে।

 

খ. শব্দের শেষে টি, টা, খান, খানা, খানি, গাছ, গাছা, গাছি ইত্যাদি নির্দেশক যোগ করে :

     মেয়েটি খুব চালাক৷

     তোমার কলমটা দাও তো।

     নৌকাখানি বেশ সুন্দর হয়েছে।

     বইখানা আমি পড়েছি।

     দড়িগাছা দিয়ে যা তো মা।

     দাদুর হাতে লাঠিগাছা বেশ মানিয়েছে।

 

গ. শব্দের আগে এক, একটা, একটি, একখানা, একজন ইত্যাদি সংখ্যাবাচক শব্দ বসিয়ে :

     এক দেশে ছিল এক রাজা।

     তোমার সাথে একটা কথা ছিল।

     একটি কলম নিয়ে দুভাইয়ের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে।

     একখানা ইংরেজি খবরের কাগজ এনো তো।

     একজন ছাত্র এসেছিল তোমার কাছে।

 

২. বহুবচন : যে শব্দ দিয়ে একের অধিক সংখ্যক বস্তু, ব্যক্তি বা প্রাণীর ধারণা পাওয়া যায়, তাকে বহুবচন বলে। যেমন :

     আমরা সেখানে গিয়েছিলাম।

     ছেলেরা মাঠে খেলছে। 

     ‘শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে। ' 

     ‘রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে। '

 

বহুবচন গঠনের নিয়ম ও উদাহরণ

বাংলা ভাষায় বহুবচন গঠনের নানা উপায় আছে। প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক এবং উন্নত প্রাণিবাচক ও ইতর প্রাণিবাচক শব্দভেদে বিভিন্ন ধরনের বহুবচনবোধক বিভক্তি, প্রত্যয় ও সমষ্টিবাচক শব্দযোগে বহুবচন গঠন করা হয়ে থাকে। যেমন :

১. শব্দের শেষে রা, এরা, গুলো, গুলি, দের বিভক্তি যোগ করে :

রা – ছেলেরা বল খেলছে।

     তারা আজ আর আসবে না।

এরা – “ভাইয়েরা আমার, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব'।”

     শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকেছে।

গুলো – আমগুলো রাজশাহী থেকে এসেছে।

     ছেলেগুলো খুব হৈচৈ করছে।

গুলি – বইগুলি জায়গা মতো তুলে রাখ।

দের – মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা শ্রদ্ধা করি।

 

২. শব্দের শেষে গণ, বৃন্দ, বর্গ, কুল, মণ্ডলী, মালা, গুচ্ছ, পাল, দল, দাম, ঝাঁক, আবলি, সব, সমূহ, রাজি, রাশি, পুঞ্জ, শ্রেণি ইত্যাদি সমষ্টিবাচক শব্দ যোগ করে :

গণ – ‘শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।’

বৃন্দ – ভক্তবৃন্দ কবিকে শুভেচ্ছা জানালেন।

কুল – সন্ধ্যায় পক্ষিকুল নীড়ে ফিরে এসেছে।

মণ্ডলী – শিক্ষকমণ্ডলী নবীন ছাত্রদের বরণ করে নিলেন।

গুচ্ছ – আমি রবীন্দ্রনাথের ‘গল্পগুচ্ছ' পড়েছি।

পাল – ‘রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।’

দল – জাতীয় ক্রিকেটদলে তার জায়গা হয়েছে।

দাম – শৈবালদামে পুকুর ভরেছে।

ঝাঁক – পায়রার ঝাঁক বাকুম বাকুম করছে।

আবলি – আজ রাতে পদাবলি কীর্তন শুনতে যাব ।

সব – ‘পাখিসব করে রব রাতি পোহাইল।'

সমূহ – অতিরিক্ত বৃক্ষনিধনের ফলে বনসমূহ উজাড় হয়ে যাচ্ছে।

রাজি – লাইব্রেরির গ্রন্থরাজির মধ্যে রয়েছে সমৃদ্ধ জ্ঞানের ভাণ্ডার।

রাশি – বাজারে নিয়ে যাবার জন্য পুষ্পরাশি চয়ন করা হয়েছে।

পুঞ্জ – মেঘপুঞ্জের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।

শ্রেণি – ধনিকশ্রেণি সব সময় নিম্নশ্রেণির উপর খবরদারি করে থাকে।

 

৩. শব্দের আগে অনেক, অজস্র, অসংখ্য, প্রচুর, বহু, বিস্তর, নানা, ঢের, সব, সকল, সমস্ত, হরেক ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে :

অনেক – এবার পরীক্ষায় অনেক ছাত্র ফেল করেছে।

অজস্র – তার অজস্র টাকা-পয়সা হয়েছে।

অসংখ্য – বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ এখনো অশিক্ষিত।

প্রচুর – বাজারে প্রচুর আম উঠেছে।

বহু – তিনি বহু সম্পত্তির মালিক।

বিস্তর – ‘সে কহে বিস্তর মিছা, যে কহে বিস্তর। ’

নানা – ‘নানা মুনির নানা মত। ’

ঢের - - বৃষ্টি আসতে এখনো ঢের বাকি।

সব – বাজারে গিয়ে সব টাকা খরচ হয়ে গেল।

সকল – পৃথিবীর সকল মানুষ আমার ভাই।

সমস্ত তার বলা সমস্ত কাহিনিই ছিল বানোয়াট।

হরেক – মেলায় হরেক রকম জিনিস পাওয়া যায়।

 

৪. একই শব্দ পর পর দুবার বসিয়ে :

ফুলে – বাগানটা ফুলে ফুলে ভরে গেছে।

হাঁড়ি – বরযাত্রীরা হাঁড়ি হাঁড়ি সন্দেশ নিয়ে এসেছে।

কাঁড়ি – মেয়ের বিয়েতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচা হয়ে গেল।

বলে – তোমাকে বলে বলে আর পারলাম না।

খেটে – আমি খেটে খেটে সারা হলাম।

দ্বারে · দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আজ ভিক্ষা জুটল না।

ছোট – ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর। '

বড় – বাবা বড় বড় আম কিনে এনেছেন।

ঘরে – আজ ঘরে ঘরে বিজয়ের আনন্দ।

বিন্দু – বিন্দু বিন্দু জল দিয়ে তৈরি হয় বিশাল সাগর।

ভালো – ক্লাসের ভালো ভালো ছেলেকে পুরস্কার দেওয়া হবে।

যে- যে যে যাবে, তারা লঞ্চে ওঠো।

 

৫. আগে সংখ্যাবাচক শব্দ বসিয়ে :

কাঞ্চনের বিয়েতে শ পাঁচেক অতিথি খাবে। 

সপ্তাহ দুই পরে মাছের দাম কমে যাবে। 

শিয়াল তার সাত ছেলেকে কুমিরের কাছে পড়তে দিল। 

দশ কেজি রসগোল্লা দিন তো।

 

৬. কখনো কখনো একবচনের রূপ দিয়ে :

মানুষ মরণশীল।

বাঙালি সব পারে।

বাগানে ফুল ফুটেছে।

বাজারে লোক জমেছে।

পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়।

বনে বাঘ থাকে।

গরু আমাদের দুধ দেয়।

 

* বিশেষ দ্রষ্টব্য

বচন মূলত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের এক বা একাধিক সংখ্যার ধারণা নির্দেশ করে। সে-কারণে শুধু বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বচনভেদ হয়৷

উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে গণ, বৃন্দ, মণ্ডলী, বর্গ এবং অপ্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে আবলি, গুচ্ছ, দাম, নিকর, পুঞ্জ, মালা, রাজি, রাশি ব্যবহৃত হয়।

রা, এরা, গণ, গুলো, কুল, সকল, সব, সমূহ প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক উভয় শব্দের বহুবচনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

বাংলা বাক্যে একই সঙ্গে একাধিক বহুবচনবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয় না। যেমন :

সকল ছাত্রদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। (ভুল)

সকল ছাত্রকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। (শুদ্ধ) 

ছাত্রদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। (শুদ্ধ)

Content added || updated By